বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে পটুয়াখালীতে পাঁচ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষের বাড়ি-ঘর। বৃহস্পতিবার (২১ মে) পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হেমায়েত উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন বিকেলেও জেলায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। স্থানীয় নদ-নদীতে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। চরাঞ্চলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতা। অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় রাঙ্গাবালী উপজেলার মাঝেরচর, চরআন্ডা, চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়াসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়াও জেলা শহরের একাধিক স্থানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একাধিক উপজেলা এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের ফলে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাদাম, ফেলন, বিভিন্ন শাক-সবজি, মরিচের ক্ষেত ও আউশের বীজতলা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাশফাকুর রহমান জানান, বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়িসহ গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানির চাপে রাঙ্গাবালীর কোড়ালিয়া লঞ্চঘাটের পন্টুন ডুবে গেছে। উপজেলার চরলতা মৌডুবী চর আন্ডা কাউখালী ও চর কাশেমের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ থেকে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে প্রায় দশটি গ্রামের ৭৫০টি ঘর বাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার লালুয়াতে সাত কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় সেখানে প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এসব দুর্গত মানুষদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদেরকে বাড়িতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় আট হাজার ১২১টি ঘড়-বাড়ি আংশিক এবং দুহাজার ৩৫৫টি ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চার হাজার ৫৫৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার সময় নদীতে পানির উচ্চতা ছিল বিপদ সীমার পৌনে ছয় ফুট উপরে। এর ফলে জেলায় প্রায় ১৭০ মিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলার পাঁচ হাজার ৭৫৪টি পুকুর এবং ৬২৩টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আট কোটি ৯৬ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। জেলার ৪০ ভাগ ম্যানগ্রোভ বাগান এবং অন্যান্য ১০ ভাগ গাছপালার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিভগীয় বন কর্মকর্তা।
এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলা কোড়ালিয়া লঞ্চঘাটের পন্টুন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষ।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী নৌবন্দরের উপ-পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান জানান, পন্টুনটি উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্য উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের র্নিবাহী প্রকৌশলী হাসান উজ্জামান জানান, মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর, সুন্দ্রা কালিকাপুর, গলাচিপার পানপট্টি, রতনদি তালতলি, তুলাতলিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার অন্তত ছয় কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে কলাপাড়া উপজেলার দেবপুর, করমজাতলা, নিজামপুর জালালপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ৭/৮ ফুট বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
Leave a Reply